বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক=শ্যামাপ্রসাদের স্বপ্ন যতদিন না পূরণ হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত লড়াই জারি থাকবে। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলছেন যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় (Anirban Ganguly)। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের জন্য একাধিক স্বপ্ন ছিল শ্যামাপ্রসাদের। তাঁকে আদর্শ হিসেবে মেনেই কাজ করছেন বলেও সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন তিনি।
অনির্বাণ নিজেও শিক্ষার জগতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শ্যামাপ্রসাদও শিক্ষার জগতের মানুষ ছিলেন। পরে দেশের স্বার্থে রাজনীতিতে এসেছিলেন। সেখানে এসে আরও জনপ্রিয় হন তিনি, জননায়ক হিসেবে লড়াই করেন।”
বিজেপি প্রার্থী আরও উল্লেখ করেন, বাঙালির অস্তিত্বের জন্য লড়াই করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। তিনিই বাংলাকে পাকিস্তানে যেতে দেননি। শ্যামাপ্রসাদ না থাকলে পশ্চিমবঙ্গটাই থাকত না বলে একান্ত সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন অনির্বাণ।
তাঁকে ‘আইকন’ বলে মেনে রাজ্যে লড়াই করছে বিজেপি। শ্যামাপ্রসাদের স্বপ্নগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে অনির্বাণ বলেন, “যত দিন না বিজেপি বাংলায় আসবে, ততদিন শ্যামাপ্রসাদ প্রাসঙ্গিক থাকবেন। ক্ষমতায় এলে আরও প্রাসঙ্গিক হবেন। তিনি যে পশ্চিমবঙ্গ চেয়েছিলেন সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে। খাঁটি বাঙালির সংস্কৃতি, রসবোধ সব ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। তাঁর জন্য বাঙালি প্রাণ ছিল। তিনি চেয়েছিলেন প্রথম সারির রাজ্য হবে পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে হবে পশ্চিমবঙ্গ। সেই স্বপ্নপূরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।”
একইসঙ্গে অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর করা উন্নয়ন আর তাঁর জনপ্রিয়তাই ভারতের মূল হাতিয়ার। তিনি বলেন, “সব প্রধানমন্ত্রীই বিদেশে যান, কিন্তু এত জনপ্রিয়তা কেউ পান না। বর্তমানে বিদেশে ভারতীয় পাসপোর্ট দেখলে তাঁকে বিশেষ সম্মান করা হয়। অনেকেই বলেন, মোদী, গ্রেট লিডার।” তাঁর আরও দাবি, অনেকে বিনিয়োগের নামে বিদেশে যান, কিন্তু কী বিনিয়োগ হচ্ছে তা বোঝা যায় না। জওহরলাল নেহরুও বিদেশে গিয়ে কিছু করতে পারেননি বলে দাবি করেন অনির্বাণ। তিনি বলেন, ‘আটজন নাবিককে ফিরিয়ে এনেছেন মোদী। মধ্য প্রাচ্যের দেশ মোদীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে।’
তবে শুধু উন্নয়নই হাতিয়ার নয় বিজেপির। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চায় বিজেপি। বিজেপি প্রার্থী বলেন, “এই তৃণমূলকে চিনি না। দলকে এখন নিয়ন্ত্রণ করছে ‘হার্মাদ’রা।” রেশন দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে অর্নিবান আরও বলছেন, “৩৫ হাজার কোটি টাকার রেশন দুর্নীতি হয়েছে। সেখানে ১০ হাজার কোটি টাকা মন্ত্রী নিয়ে নিয়েছেন। তিন কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড পাওয়া গিয়েছে।” মিড ডে মিল স্কিমেও যে কত বড় দুর্নীতি হয়েছে তাও একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী।
পাশাপাশি পুরসভা দুর্নীতি নিয়েও শাসকদলকে আক্রমণ শানিয়েছেন। অর্নিবাণের কথায়, ‘১৪টি পুরসভা এই মুহূর্তে আন্ডার স্ক্যানার।’ এমনকি তৃণমূল সরকার ‘অ্যান্টি বাঙালি’ বলেও আক্রমণ শানান বিজেপি নেতা। ব্যাখ্যা করে বলেন, “ভালো করার নামে বাংলার ক্ষতি করছে। উন্নয়নের নামে ক্ষতি করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন বাঙালি আইকনদের জন্য কিছু করতে গিয়েছেন, তখনই এরা সেটার বিরোধিতা করেছে।” এই প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনে হেরিটেজ ঘোষণা নিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরোধিতার কথা উল্লেখ করেন অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়।
তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী পরিশ্রম করে বাংলার দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা পাইয়ে দিলেন, কিন্তু তাঁর বিরোধিতা করা হল। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে সর্বস্তরে সম্মান দিলেন প্রধানমন্ত্রী। মূর্তি উন্মোচন থেকে শুরু করে জাতীয় পুরস্কার ঘোষণা, এমনকী আজাদ হিন্দ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নেতাজিকে অ্যাখ্যাও দিয়েছেন মোদী। কিন্তু তাঁরও বিরোধিতা করা হয়েছে বলে মন্তব্য অর্নিবানের।
অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোট নিয়ে সিপিএম-কে আক্রমণ করতেও ছাড়েননি তিনি। তাঁর কথায়, এই রাজ্যে তৃণমূল আর সিপিএমের গোপন আঁতাত আছে। আইএসএফের সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন সিপিএম যাদবপুরে প্রার্থী দিয়ে দিল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি সিপিএমকে সাম্প্রদায়িক বলে কটাক্ষ করে অর্নিবাণ বলেন, ‘মহম্মদ সেলিমকে কেন মুর্শিদাবাদে গিয়ে দাঁড়াতে হল!’
প্রার্থী অনির্বাণের মূল লক্ষ্য যাদবপুরের উন্নয়ন। তিনি বলেন, “বাইপাসের ধারে বহুতল গড়ে উঠছে, আর সেখান থেকে ১০ মিনিট হেঁটে গেলেই রাস্তা খারাপ।” তিনি চান, শুধু রাস্তা-ঘাট নয়, যে সব মন্দির আছে, সেগুলির সংস্কার করা হোক, যাতে তাকে ঘিরে উন্নয়ন হয়। তিনি জানান, বারুইপুরের অনেক ইতিহাস আছে, যাকে ঘিরে ধর্মীয় স্থান গড়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে, যাদবপুর কেন্দ্রের এতদিন যাঁরা সাংসদ হয়েছেন, তাঁদের কাজকর্মের কথাও বলেন অনির্বাণ। তাঁর দাবি, কবীর সুমন হোক বা মিমি চক্রবর্তী, কেউই মানুষের পাশে দাঁড়াননি। এমনকি সুগত বসুকেও আক্রমণ শানিয়েছেন যাদবপুরের এই বিজেপি প্রার্থী। মনে করিয়ে দিয়েছেন, যাদবপুরের প্রার্থীরা কেউ দ্বিতীয়বারের জন্য প্রার্থী হননি। তাঁর কথায়, প্রত্যেককেই দল দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছেন। তাই একবার অন্তত বিজেপিকে সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।