Spread the love

বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা নিটের প্রশ্নফাঁসকে কেন্দ্র করে উত্তাল দেশ। ঘটনার প্রতিবাদে লাগাতার চলছে। শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছে দেশের বিরোধী দলগুলি।

তৃতীয়বারের জন্য দিল্লির মসনদে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। কিন্তু শুরুতেই শিক্ষা নিয়ে কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রবল চাপে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু কীভাবে এত বড় কেলেঙ্কারি সম্ভব! পিছনে বড় মাথা নাকি টাকা! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

মহেশ্বর পেরি (Maheshwar Peri) (Founder and Chairman of Careers360) সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর একটি ভিডিও সামনে এনেছেন। যেখানে এমবিবিএসে অ্যাডমিশন (MBBS Admissions) এবং প্রশ্নফাঁস (Paper Leaks) এর একটা অন্ধকার দিক তুলে ধরেছেন তাঁর ভিডিওতে। একেবারে নথি দিয়ে দেখিয়েছেন কীভাবে কেলেঙ্কারি (NEET UG controversy) ঘটছে।

মহেশ্বর বলছেন, প্রত্যেক বছর NEET দেয় ২৩,৩৩,২৯৭ জন। যার মধ্যে ছাত্র ৪৩ শতাংশ এবং ছাত্রী ৫৭ শতাংশ। অন্যদিকে Jee Main দেয় ১৪,১৫,১১০ জন। যার মধ্যে ছাত্র ৬৭ শতাংশ এবং ৩৩ শতাংশ ছাত্রী থাকেন বলে দাবি কেরিয়ার ৩৬০ এর কর্তার। শুধু তাই নয়, দেশে কতগুলি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেই সংক্রান্ত একটা হিসাব তুলে দিয়েছেন। এবং সেখানে কত পরীক্ষার্থী তাও উল্লেখ করেছেন।

মহেশ্বর তাঁর প্রতিবেদনে National Medical Commission এর ডেটা অনুযায়ী MBBS এর আসন সংখ্যা তুলে ধরেছেন। তথ্য বলছেন মোট ৭০৪ টি কলেজ রয়েছে। যার মধ্যে আসন ১০৯১৭০। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ৭ টি। আসন সংখ্যা ১১৮০ টি, বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৮২ টি। যেখানে আসন সংখ্যা ৫৫২২৫ টি, প্রাইভেট কলেজ রয়েছে ২৬৪ টি। সেখানে আসন সংখ্যা ৪২৫১৫ টি এবং ডিমেড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫১ টি। আসন সংখ্যা ১০ হাজার ২৫০ টি।

এই সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ কত সেই সংক্রান্ত একটি উদাহরণ তুলে ধরেছেন মহেশ্বর পেরি। তিনি বলছেন, AIIMS Jodhpur -এ পড়ার ক্ষেত্রে অ্যাডমিশন ফি পাঁচ হাজার তিনশ ৫৬ টাকা। এর সঙ্গে যদি মেশ ফি ধরা হয় তাহলেও খরচ ৩৬২২৫ টাকা।

এক্ষেত্রে পাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যও দিয়েছেন মহেশ্বর। তাঁর দাবি, ভারতের ম্পোট ২৬৪ টি কলেজের মোট আসন ৪২৫১৫। সেখানে প্রত্যেক বছর পড়ার খরচ ১২,৭৬,৪৪৬ টাকা। সেক্ষেত্রে মোট এডুকেশন খরচ ৭৮.82 লাখ টাকা। অন্যদিকে সাতটি সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন ১১৮০ টি। সেখানে বছরে পড়ার খবর ২২,৯৭৯ টাকা। সেক্ষেত্রে মোট পড়ার খবরচ ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে Deemed ইউনিভার্সিটি খরচ কত তাও একেবারে তথ্য সহকারে তুলে ধরেছেন মহেশ্বর।

তাঁর দাবি, ওপেন ক্যাটাগরির জন্য টার্ম ফি ১ লাখ ৩৪ হাজার (কলেজ ফি), ব্যাকওয়ার্ড ক্যাটাগরি ১লাখ ১৪ হাজার টাকা। এই বিষয়ে বিভিউন্ন কলেজের কত ভর্তির টাকা সেই তথ্য দিয়েছেন ‘কেরিয়ার ৩৬০’ এর মালিক।

এমনকি তাঁর দেওয়া তথ্য বলে দিচ্ছে যে অনেক ক্ষেত্রে কম নম্বর পেয়েও নিটে র‍যাংক করা সম্ভব। আর সেখান থেকেই পাওয়া যায় ডাক্তারি পড়ার সুযোগ।

যেমন ধরুন ২০২৩ সালে কাট অফ মার্কস ছিল ১৩৭। অর্থাৎ ১৯. ০৩ শতাংশ পেলেই neet পাশ করা সম্ভব। আর ২০২৪ সালে কাট অফ মার্কস রাখা হয় ১৬৪ অর্থাৎ ২২.৭৮ শতাংশ পেলেই পাশ। প্রশ্ন হল, সাধারণত যে কোনো পরীক্ষায় পাশ করতে গেলে অন্তত ৩০ শতাংশ নম্বরের প্রয়োজন পড়ে। তাহলে মেডিক্যাল এর প্রবেশিকায় কেন এত কম নম্বর লাগে?

এবার দেখে নিন বেসরকারি কলেজ গুলিতে পড়তে গেলে কত নম্বর লাগে। তামিলনাড়ু র এ সি এস মেডিক্যাল কলেজে পড়তে গেলে ১৩৭ পেলেই চলবে অর্থাৎ ১০ লক্ষ ১২ হাজার ৩৯২ রাঙ্ক করেও অনায়াসে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়। পন্ডিচেরির শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ ইনস্টিটিউট এ পড়তে গেলে ১১০ পেলেই যথেষ্ট। অর্থাৎ ১১ লক্ষ ৯১ হাজার ৪১২ রাঙ্ক করা ছাত্র বা ছাত্রী পড়তে পারে ওই কলেজে। খরচের বহর দেখে বোঝাই যাচ্ছে প্রাইভেট কলেজ গুলো ধনী দের জন্য সংরক্ষিত। তাহলে মেধার কি কোনো জায়গাই নেই?

মহেশ্বরী বলছেন, দেশের বেসরকারি কলেজগুলিতে কিন্তু অন্য দেশের পড়ুয়াদেরও পড়ার সুযোগ থাকে। সে ক্ষেত্রে ফি অর্থাৎ পড়ার খরচ আরও বেশি। আর তা কত? সে বিষয়েও তথ্য দিয়েছেন। ভিডিওতে মহেশ্বরী বলছেন, মহারাষ্ট্রের ভারতী বিদ্যাপীঠ মেডিক্যাল কলেজে একজন এনআরআই ছাত্রের পড়ার খরচ বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার কাছাকাছি। চমকে উঠলেন তো! ওঠার মতোই তথ্য।

অন্যদিকে এই হিসেব দেখলে বোঝা যাচ্ছে সরকারি ক্ষেত্রে খরচ মোটামুটি সাড়ে ৩ লক্ষ থেকে সাড়ে ৬ লক্ষ, আর প্রাইভেট কলেজে খরচ ৮০ লক্ষ থেকে দেড় কোটি। এর মাঝে পড়ে যাচ্ছে কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী, যাদের বেসরকারি কলেজে পড়ার মতো বিপুল টাকাও নেই আবার সরকারি কলেজে পড়ার মতো মেধা ও নেই। তারাই এম বি বি এস পড়তে চলে যাচ্ছে বিদেশে। চলে যাচ্ছে ইউক্রেন বা রাশিয়ায়। সেখানে কম খরচে ডাক্তারি পড়ছে।

বিদেশ থেকে পড়ে এলে আবার ভারতে একটি পরীক্ষা দিতে হয়। FMGE নামে ওই পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, তাতেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে কত chhel মেয়ে বাইরে যাচ্ছে। কিন্তু এখানে এসে তারা যে পরীক্ষা দিচ্ছে তাতে পাশের হার খুব কম। আর এই জটিলতার মধ্যে পড়ে কার্যত হারাচ্ছে মেধা। এমনটাই বলছেন মহেশ্বর পেরি (Maheshwar Peri) তাঁর ভিডিও’তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *